preloader_image

মাংকিপক্স!!! কি কেন কিভাবে হয় এবং ঝুঁকি কতটুকু?

Esteem Soft Limited || 27-May-2022 || 229 Last Updated: 27-05-2022 10:39 AM

মাংকিপক্স!!!!!!

অনেকেই আতংকিত। আমাদের দেশে এসে গিয়েছে কিনা? এটা কি, হলে কি হয়, আর ঝুঁকি কতটুকু?

গুটি বসন্তের (Small Pox) সর্বশেষ ন্যাচারাল কেসটি ছিল ১৯৭৮ সালে, আর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় ১৯৮০ সালে। সেই গুটিবসন্তের জাত ভাই (অর্থপক্সভাইরাসের) এর একটা সদস্য এই মাংকিপক্স। প্রথম, ১৯৫৮ সালে এই ভাইরাস বানরের মধ্যে দেখা যায়, তাই সেখান থেকেই থেকে নাম আসে মাংকিপক্স।

গুটি বসন্তের টিকা দেয়ার কারনে মানুষের মধ্য মাংকিপক্সের বিরুদ্ধেও কিছুটা প্রটেকশেন পেত। গুটি বসন্ত বিলুপ্ত হওয়ায়, গুটি বসন্তের টিকা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর আবার কিছু কিছু জায়গায় মাংকিপক্স এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

১৯৭০ সালে কংগোতে মানুষের শরীরে প্রথম সনাক্ত হয়, আর সেখানে ১৯৬৮ সালে গুটিবসন্তকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। থেমে থেমে আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয় যা ২০১০ সাল থেকে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে কংগো তে ৪,৬০০ কেইস পাওয়া গিয়েছিল মাংকিপক্সের। ২০১৭ থেকে ৫০০+ কেইস পাওয়া গিয়েছে নাইজেরিয়াতে। ২০০৩ সালে ৭০টা কেইস পাওয়া গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে।

সাম্প্রতিক মাংকিপক্স সংক্রমিত এলাকার তথ্য উপাত্তে জানা যায় এর সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার গড়ে ৩%-৬%। আফ্রিকার যেই গ্রামগুলোতে মাঝে মাঝেই প্রকোপ প্রকাশিত হয়, সেখানকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আফ্রিকা অঞ্চলের চেয়ে মৃত্যুর আশংকা অনেক কম।

সাধারনত মাংকিপক্স ছড়ায় পশু থেকে মানুষের কাছে - যেমন কাঠবিড়ালি, ইদুর ইত্যাদি। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একটা আউটব্রেক হয়েছিল একটা কুকুরের মাধ্যমে। সেই কুকুর কে রাখা হয়েছিল ইদুরের সাথে যার থেকে ট্রান্সমিশান হয়।

এবারের আউট ব্রেকটা অন্য রকম কারন কখনো এত দেশে একই সাথে এত ভাইরাস ছড়ায় নাই। ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাস এখন মানুষ থেকে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ইউরোপে বেশ কিছু কেইস দেখা গিয়েছে যাদের পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমনের কোন হিস্ট্রি নাই। কোয়ারেন্টাইন সাধারণত ৩০দিন বা এক মাসের।

সংক্রমিত হওয়ার ৫-২১ দিন পর উপসর্গ শুরু হয়।

উপসর্গ গুলো কি কি? - জ্বর (১০০.৪ ডিগ্রি ও উপরে) এর সাথে মাথা ব্যাথা, গা-হাত-পা ব্যাথা এবং প্রচন্ড ক্লান্ত লাগা। লিম্ফ নোড (লসিকা গ্রন্থি) ফুলে যাওয়া। জ্বরের ৪-৫ দিন পর আসে র‍্যাশ, যেটা গোটা গোটা হয়ে ওঠে- কিছুটা জলবসন্ত বা চিকেনপক্সের মত কিন্তু সাইজে আরেকটু বড়। শুরু হয় মুখ বা যৌনাঙ্গে তারপর ছড়িয়ে পরে শরীরে।

কোভিডের তুলনা সংক্রমনের হার এখনো অনেক কম কিন্তু শুন্য নয়। মানুষ থেকে মানুষ ছড়ায় কয়েক ভাবে - এই চর্ম গোটা গুলোর স্পর্শে আসলে। অসুস্থ রোগীর ব্যবহৃত কাপড় বা বেডশিট থেকে। কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে। সেক্সুয়াল ট্রান্সমিশান প্রমানিত না হলেও এর সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। সব চেয়ে বেশি ঝুকি রুগির একদম কাছের মানুষের - যারা তার সাথে ঘুমায়, তার কাপড়-বেডশিট পরিষ্কার করে ইত্যাদি। এর পর অনেক ঝুঁকি স্বাস্থ্যকর্মীদের। পিপিই জরুরি।

অধিকাংশ মানুষের কিছুটা খারাপ লাগলেও কোন সমস্যা ছাড়াই ভাল হয়ে যায় ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে জটিল হতে পারে। ।ফুসফুস এর সংক্রমণ (নিউমোনিয়া), ব্রেইন এর (এনকেফালাইটিস), চোখের (বিশেষ করে কর্নিয়ার) এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে যাওয়া ইনফেকশান (সেপসিস) এর কারনেই জটিল অবস্থায় পৌঁছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই সব জটিলতা দক্ষভাবে সামাল দেয়া সম্ভব।

বেশি করে পানি পান করা ও প্যারাসিটামলের প্রয়োগ এ অধিকাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে যায়। জটিলতা হলে তার জন্য বিশেষ কিছু ওষুধ লাগতে পারে। একটা লাইসেন্স করা ওষুধ (tecovirimat) আছে যেটা স্মলপক্সে ব্যবহৃত হয়েছিল, বর্তমানে ইউরোপিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সীমিত আকারে এই ঔষধটির লাইসেন্স দেয় যা বাণিজ্যিকভাবে এখনো সহজলভ্য নয়। স্মলপক্স এর ভ্যাকসিন ৮৫% প্রটেকশান দেয়। যদিও আমরা যারা অনুর্ধ্ব-৪০, তারা কেউ এই টিকা পাইনাই। মাংকিপক্সের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একটা ভ্যাকসিন আছে যদিও উৎপাদন নাই।

নতুন আউটব্রেক নিয়ে অনেক কিছুই অজানা। এটা কি একটা নতুন ভ্যারিয়েন্ট যার কারনে আগের চেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে? পুরাতন তথ্য ও উপাত্ত বলে, এটি তেমন সংক্রামক নয়, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় কতটা সংক্রামক? এর মৃত্যুর হার কত? স্মলপক্স ভ্যাকসিন কি আদৌ আগের মত প্রটেকশান দিবে? এটা কি মহামারি আকার ধারন করতে পারে? সময়ই এইসব প্রশ্নের জবাব দিবে যেমন করে কোভিডের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।

[তথ্যসূত্র-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা]